chlonbil-2

পাটুল হালতি বিল ( মিনি কক্সবাজার )

নাটোর সদর উপজেলার পিপরুল, খাজুরা, মাধনগর ও ব্রক্ষপুর ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকা হালতি বিলের অংশ । বৈশাখ মাস হতে কার্তিক মাস পর্যন্ত বিল এলাকা ৫ ফুট হতে ৮ ফুট পানিতে নিমজ্জিত থাকে । প্রাকৃতিক মাছের প্রজননস্থল হিসেবে হালতি বিল বিখ্যাত । হালতি বিল আত্রাই নদীর সাথে সংযুক্ত । শীতকালে হালতি বিলের যে অংশে পানি থাকে – তা ম‌ৎস অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে । ফলে উক্ত অভয়ারন্যে শীতকালে যে মাছগুলোকে সংরক্ষন করা হয় – সেগুলো বর্ষাকালে হালতি বিলে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রজনন মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রচুর পরিমান মাছ উৎপাদন করে । এ এলাকায় উৎপাদিত ছোট-বড় দেশী মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু । বর্ষাকালে এ এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়নাভিরাম । বর্ষাকালে হালতি বিলে নৌ-ভ্রমনের জন্য পাটুল- হাপানিয়া এলাকায় প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে ।

Chalon_Bil,_Natore

ভ্রমণ করুন নাটোর চলন বিল

চলনবিল বলতে চলমান (চলন্ত) বিলকে বোঝায়। অর্থাৎ যে বিল প্রবাহমান। বিল সাধারণত বদ্ধ থাকে; তবে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল চলনবিলের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হতো। এ বিলের চলমান পানির অংশের পরিধি সঙ্কোচিত হতে হতে এখন এটা বদ্ধ বিলে পরিণত হয়েছে। এতে বদলে গেছে চলনবিল; দিনের পর দিন এর পরিধিও সঙ্কোচিত হচ্ছে। ১৯০৯ সালে চলনবিল জরিপ কমিটির রিপোর্ট মোতাবেক, চলনবিলের আয়তন ছিল এক হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। উইকিপিডিয়া ও বাংলা পিডিয়ায় এর আয়তন দেখানো হয়েছে ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার। পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, সিংড়া, গুরুদাসপুর এবং নওগাঁ জেলার আত্রাই রানীনগর চলনবিলের আওতাভুক্ত। ১৯১৪ সালে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথ স্থাপন হওয়ায় চলনবিল বিভক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ রেল লাইনের উত্তর ও পশ্চিম অংশকে চলনবিল বলা হয়। চলনবিল এলাকায় জমির পরিমাণ রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮শ’ ৭ হেক্টর। সমগ্র চলনবিল বিষুবরেখার ২৪ ডিগ্রী ৭মিনিট থেকে ২৪ ডিগ্রী ৩৫ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ ডিগ্রী ১০ মিনিট থেকে ৮৯ ডিগ্রী ৩৫ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।

Screenshot_1

ঐতিহাসিক চৌগ্রাম জমিদার বাড়ির একাংশ

ইতিহাসবিদ ও স্হানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৭২০ সালে জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে চলন বিলের উত্তর পূর্ব কোণে প্রায় ৪৮ একর জমির উপর ৯টি পুকুরসহ রাজা রামজীবনের দান করা এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার রসিক রায় ।

DSC04839-300x225

রাণী ভবানী রাজবাড়ী

মোঘল শাসনামলে কামদেব মৈত্র ‘সরকার’ উপাধি প্রাপ্ত হন। পুঠিয়ার রাজা নরনারায়ণের সময়ে লস্করপুর পরাগনার অন্তর্ভুক্ত বাড়ইহাটি গ্রামের একজন তহশীলদার ছিলেন কামদেব সরকার। তহশীলদারী কাজের জন্য তাকে সময়ে সময়ে পুঠিয়ার রাজদরবারে আসা-যাওয়া করতে হতো। পুঠিয়া সে সময় ছিল বিখ্যাত জ্ঞান অর্জনের স্থান। তাঁর তিন পুত্র রামজীবন, রঘুনন্দন ও বিষ্ণুরাম পুঠিয়া থেকে লেখাপড়া করতেন। তিন পুত্রের মধ্যে মধ্যম পুত্র রঘুনন্দন ছিলেন বুদ্ধিমান। তিনি মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করেন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রীয় ভাষা পারসীতে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের সহযোগিতায় নবাব সরকারে চাকুরী প্রাপ্ত হন। রঘুনন্দন নবাব সরকারে ক্রমান্বয়ে প্রাধান্য বিস্তার করেন এবং বড় ভাই রামজীবনের নামে অনেক জমিদারী বন্দোবস্ত করে নেন। এভাবে রামজীবন রাজা উপাধি পেয়ে নাটোরে রাজ্য স্থাপন করেন। রামজীবনের জমিদারী প্রাপ্তি বা রাজা হবার পেছনে বেশ কিছু অলৌকিক কাহিনী আছে। যেমন, কারও মতে রামজীবন ও রঘুনন্দন প্রথম জীবনে পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের পূজার ফুল সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। একদিন ফুল তুলতে তুলতে রামজীবন ক্লান্ত হয়ে বাগানের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন। এমন সময় রাজা দর্পনারায়ণ সে পথ দিয়ে গমনের সময় দেখতে পেলেন যে, রামজীবনের মাথার ওপর দুটি বিষধর সর্প ফণা বিস্তার করে কঠিন সূর্যের তাপ থেকে তাকে রক্ষা করছে। এরূপ অলৌকিক ঘটনা রাজ্য প্রাপ্তির পূর্বাভাস বলে লোকে বিশ্বাস করতো। রাজা দর্পনারায়ণও সে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে রামজীবনকে ডেকে বলেন, ‘‘তুমি রাজা হবে, তবে রাজা হয়ে যেন পুঠিয়া রাজ্য গ্রাস করো না।’’ পরবর্তীতে রাজা দর্পনারায়ণের মাধ্যমেই রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। অনেকের মতে কামদেবের তিনপুত্র পুঠিয়া থেকে লেখাপড়া করতেন। তিন পুত্রের মধ্যে মধ্যম পুত্র রঘুনন্দন লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন। তার হাতের রাজশ্রী দেখে রাজা দর্পনারায়ণ ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন, তিনি রাজা হবেন। সে সময় থেকে রাজা দর্পনারায়ণ রঘুনন্দনকে খুব স্নেহের চোখে দেখতেন এবং তার লেখাপড়ার প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতেন। কোনো এক সময় নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ রাজা দর্পনারায়ণকে মুর্শিদাবাদে ডেকে পাঠান। রাজার সঙ্গে রঘুনন্দনও মুর্শিদাবাদে গমন করেন। মুর্শিদকুলী খাঁ রঘুনন্দনের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন এবং তিনি দর্পনারায়ণকে অনুরোধ করেন রঘুনন্দনকে রেখে পুঠিয়ায় ফিরে আসেন। তারপর রঘুনন্দন তার প্রতিভা বলে নবাবের দেওয়ান পর্যন্ত হন এবং ভাই রামজীবনের নামে বহু জমিদারী বন্দোবস্ত করেন।

This is the official Website of Uttara Ganabhaban -Copyright ©2022, Uttara Government of Bangladesh. Design & Develop by JBD IT