chlonbil-2

পাটুল হালতি বিল ( মিনি কক্সবাজার )

নাটোর সদর উপজেলার পিপরুল, খাজুরা, মাধনগর ও ব্রক্ষপুর ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকা হালতি বিলের অংশ । বৈশাখ মাস হতে কার্তিক মাস পর্যন্ত বিল এলাকা ৫ ফুট হতে ৮ ফুট পানিতে নিমজ্জিত থাকে । প্রাকৃতিক মাছের প্রজননস্থল হিসেবে হালতি বিল বিখ্যাত । হালতি বিল আত্রাই নদীর সাথে সংযুক্ত । শীতকালে হালতি বিলের যে অংশে পানি থাকে – তা ম‌ৎস অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে । ফলে উক্ত অভয়ারন্যে শীতকালে যে মাছগুলোকে সংরক্ষন করা হয় – সেগুলো বর্ষাকালে হালতি বিলে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রজনন মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রচুর পরিমান মাছ উৎপাদন করে । এ এলাকায় উৎপাদিত ছোট-বড় দেশী মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু । বর্ষাকালে এ এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়নাভিরাম । বর্ষাকালে হালতি বিলে নৌ-ভ্রমনের জন্য পাটুল- হাপানিয়া এলাকায় প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে ।

Chalon_Bil,_Natore

ভ্রমণ করুন নাটোর চলন বিল

চলনবিল বলতে চলমান (চলন্ত) বিলকে বোঝায়। অর্থাৎ যে বিল প্রবাহমান। বিল সাধারণত বদ্ধ থাকে; তবে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল চলনবিলের মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হতো। এ বিলের চলমান পানির অংশের পরিধি সঙ্কোচিত হতে হতে এখন এটা বদ্ধ বিলে পরিণত হয়েছে। এতে বদলে গেছে চলনবিল; দিনের পর দিন এর পরিধিও সঙ্কোচিত হচ্ছে। ১৯০৯ সালে চলনবিল জরিপ কমিটির রিপোর্ট মোতাবেক, চলনবিলের আয়তন ছিল এক হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। উইকিপিডিয়া ও বাংলা পিডিয়ায় এর আয়তন দেখানো হয়েছে ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার। পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, সিংড়া, গুরুদাসপুর এবং নওগাঁ জেলার আত্রাই রানীনগর চলনবিলের আওতাভুক্ত। ১৯১৪ সালে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথ স্থাপন হওয়ায় চলনবিল বিভক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ রেল লাইনের উত্তর ও পশ্চিম অংশকে চলনবিল বলা হয়। চলনবিল এলাকায় জমির পরিমাণ রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮শ’ ৭ হেক্টর। সমগ্র চলনবিল বিষুবরেখার ২৪ ডিগ্রী ৭মিনিট থেকে ২৪ ডিগ্রী ৩৫ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ ডিগ্রী ১০ মিনিট থেকে ৮৯ ডিগ্রী ৩৫ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।

Screenshot_1

ঐতিহাসিক চৌগ্রাম জমিদার বাড়ির একাংশ

ইতিহাসবিদ ও স্হানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৭২০ সালে জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে চলন বিলের উত্তর পূর্ব কোণে প্রায় ৪৮ একর জমির উপর ৯টি পুকুরসহ রাজা রামজীবনের দান করা এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার রসিক রায় ।

DSC04839-300x225

রাণী ভবানী রাজবাড়ী

মোঘল শাসনামলে কামদেব মৈত্র ‘সরকার’ উপাধি প্রাপ্ত হন। পুঠিয়ার রাজা নরনারায়ণের সময়ে লস্করপুর পরাগনার অন্তর্ভুক্ত বাড়ইহাটি গ্রামের একজন তহশীলদার ছিলেন কামদেব সরকার। তহশীলদারী কাজের জন্য তাকে সময়ে সময়ে পুঠিয়ার রাজদরবারে আসা-যাওয়া করতে হতো। পুঠিয়া সে সময় ছিল বিখ্যাত জ্ঞান অর্জনের স্থান। তাঁর তিন পুত্র রামজীবন, রঘুনন্দন ও বিষ্ণুরাম পুঠিয়া থেকে লেখাপড়া করতেন। তিন পুত্রের মধ্যে মধ্যম পুত্র রঘুনন্দন ছিলেন বুদ্ধিমান। তিনি মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করেন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রীয় ভাষা পারসীতে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের সহযোগিতায় নবাব সরকারে চাকুরী প্রাপ্ত হন। রঘুনন্দন নবাব সরকারে ক্রমান্বয়ে প্রাধান্য বিস্তার করেন এবং বড় ভাই রামজীবনের নামে অনেক জমিদারী বন্দোবস্ত করে নেন। এভাবে রামজীবন রাজা উপাধি পেয়ে নাটোরে রাজ্য স্থাপন করেন। রামজীবনের জমিদারী প্রাপ্তি বা রাজা হবার পেছনে বেশ কিছু অলৌকিক কাহিনী আছে। যেমন, কারও মতে রামজীবন ও রঘুনন্দন প্রথম জীবনে পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের পূজার ফুল সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। একদিন ফুল তুলতে তুলতে রামজীবন ক্লান্ত হয়ে বাগানের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন। এমন সময় রাজা দর্পনারায়ণ সে পথ দিয়ে গমনের সময় দেখতে পেলেন যে, রামজীবনের মাথার ওপর দুটি বিষধর সর্প ফণা বিস্তার করে কঠিন সূর্যের তাপ থেকে তাকে রক্ষা করছে। এরূপ অলৌকিক ঘটনা রাজ্য প্রাপ্তির পূর্বাভাস বলে লোকে বিশ্বাস করতো। রাজা দর্পনারায়ণও সে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে রামজীবনকে ডেকে বলেন, ‘‘তুমি রাজা হবে, তবে রাজা হয়ে যেন পুঠিয়া রাজ্য গ্রাস করো না।’’ পরবর্তীতে রাজা দর্পনারায়ণের মাধ্যমেই রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। অনেকের মতে কামদেবের তিনপুত্র পুঠিয়া থেকে লেখাপড়া করতেন। তিন পুত্রের মধ্যে মধ্যম পুত্র রঘুনন্দন লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন। তার হাতের রাজশ্রী দেখে রাজা দর্পনারায়ণ ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন, তিনি রাজা হবেন। সে সময় থেকে রাজা দর্পনারায়ণ রঘুনন্দনকে খুব স্নেহের চোখে দেখতেন এবং তার লেখাপড়ার প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতেন। কোনো এক সময় নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ রাজা দর্পনারায়ণকে মুর্শিদাবাদে ডেকে পাঠান। রাজার সঙ্গে রঘুনন্দনও মুর্শিদাবাদে গমন করেন। মুর্শিদকুলী খাঁ রঘুনন্দনের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন এবং তিনি দর্পনারায়ণকে অনুরোধ করেন রঘুনন্দনকে রেখে পুঠিয়ায় ফিরে আসেন। তারপর রঘুনন্দন তার প্রতিভা বলে নবাবের দেওয়ান পর্যন্ত হন এবং ভাই রামজীবনের নামে বহু জমিদারী বন্দোবস্ত করেন।

Dayarampur-Rajbari29-626x365

দয়ারামপুর রাজবাড়ী

দিঘাপতিয়া রাজা প্রমথনাথ রায়ের (১৮৪৯-১৮৮৩) জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রমদানাথ রায় ১৮৯৪ সালে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তার তিন কনিষ্ঠ ভ্রাতা কুমার বসন্ত কুমার রায়, কুমার শরৎকুমার রায় এবং কুমার হেমেন্দ্রকুমার রায়ের জন্য বড়াল নদীর তীরে নন্দীকুজা নামক স্থানে ‘‘দিঘাপতিয়া জুনিয়র রাজ দয়ারামপুর এস্টেটস’’ স্থাপন করেন। তাদের প্রপিতামহের পিতাসহ নাটোরের রাণী ভবানীর অসাধারণ দক্ষ দেওয়ান ও দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দয়ারামপুরের নামানুসারে এই এলাকার নাম হয় দয়ারামপুর, আর বাড়ীর নাম হয় ‘‘দয়ারামপুর জমিদারবাড়ী’’। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখায় পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে শহীদ লেঃ কর্ণেল আব্দুল কাদিরের নামে এই জায়গায় কাদিরাবাদ সেনানিবাস স্থাপিত হয়।

_DSC0188

নাটোরের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

কবির কল্পনায় নাটোর অমর হয়ে আছে কাব্যে। প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐশ্বর্য্য মন্ডিত বরেন্দ্র ভূমি সংলগ্ন নাটোর জেলা। ২৪.২৬০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৯০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নারদ নদের উত্তর তীরে নাটোর শহর অবসিহত। আধুনিক কালের এ শহরটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এক অধ্যায়। একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সামন্তরাজ ও এক মহীয়সী নারীর রাজ্য শাসন ও জনকল্যান ব্যবস্থা। কথিত আছে মোঘল আমলের পাঠান জমিদার লস্কর খাঁ তাঁর সৈন্য সামন্তদের জন্য যে সহান (বর্তমান পুঠিয়া এলাকা) হতে রসদ সংগ্রহ করতেন, কালক্রমে তার নাম হয় লস্করপুর পরগনা। এই পরগনার একটি নীচু জলাভূমির নাম ছিল ছাইভাংগা বিল। ১৭১০ সনে রাজা রাম জীবন রায় এ সহানে মাটি ভরাট করে তার রাজধানী সহাপন করেন। কালত্রুমে তা প্রাসাদ, দীঘি, উদ্যান, মন্দির ও মনোরম অট্রালিকা দ্বারা সুসজ্জিত নগরিতে পরিনত হয়। মোঘল আমলের কিছুকাল বর্তমান নাটোর জেলার গুরতদাসপুর উপজেলার চাপিলা গ্রামে চাপিলা পরগনার কেন্দ্র এবং পরবর্তীতে জেলা সদর ছিল বলে জানা যায়। পরে চাপিলা অস্বাস্থ্যকর স্থান বিবেচিত হওয়ায় জেলা সদর নাটোরে স্থানান্তরিত হয়। ১৮২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নাটোরে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার সদর কার্যালয় ছিল। স্বাস্থ্যগত কারণে বিশেষকরে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণে ইংরেজ সরকার ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে জেলা সদর নাটোর হতে রামপুর বোয়ালিয়ায় (বর্তমান রাজশাহী) স্থানান্তর করেন। নাটোর মহকুমা সৃষ্টি হয় ১৮৪৫ সালে। নাটোরকে স্বাস্থ্যকর করে গড়ে তোলার জন্য ১৮৬৯ সালে নাটোর পৌরসভা স্থাপিত হয়। ১৯৮৪ সালে নাটোর মহকুমা থেকে জেলায় রূপান্তরিত হয়।
কথিত আছে যে, বর্তমান নাটোর শহরের উপরেই এক সময় চলন বিল বিস্তৃত ছিল। জনৈক রাজা নৌকাপথে সেই স্থানের নিকট দিয়ে যাবার সময় একটি বেঙ কর্তৃক সাপকে ধরা দেখে নৌকার মাঝিদের ‘নাও ঠারো’- অর্থাৎ নৌকা থামাও; মতান্তরে ‘ন ঠারো’- অর্থাৎ নৌকা থামিও না বলেন। এরূপ বলার কারণ, তখন জলপথে দস্যু-তস্করের আক্রমন হতো। তারাও দস্যু কবলিত হতে পারেন- এই আশংকায় তাড়াতাড়ি উক্ত স্থান ত্যাগ করাই হয়তো শ্রেয় মনে করেন। আবার হিন্দু ধর্মমতে বেঙ সাপকে ধরলে মনসাদেবী ক্রোধান্বিত হন। সুতরাং নৌকা থামিয়ে মনসা পুজা করাই হিন্দু রাজার পক্ষে অধিক সংগত। তাই জন্য ‘নাও ঠারো’ অথবা ‘ন ঠারো’ কথা হতেই নাটোর নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
ঐতিহাসিকদের মতে অষ্টাদশ শতকে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি। উত্তরবংগের জমিদারগনের মধ্যে নাটোর রাজ মান-মর্যাদা ও বিষয় সম্পত্তিতে ছিলেন অগ্রগন্য। রাজা রামজীবন রায় নাটোর রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। রামজীবনের পালিত পুত্র রামকান্ত রায়ের সাথে বগুড়া জেলার ছাতিয়ান গ্রামের আত্মারাম চৌধুরীর একমাত্র কন্যা ভবানীর বিবাহ হয়। রাজা রামজীবন রায় ১৭৩০ সালে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি রামকান্ত রায়কে রাজা এবং দেওয়ান দয়ারাম রায়কে তার অভিভাবক নিযুক্ত করেন। রামকান্ত রাজা হলেও প্রকৃত পক্ষে সম্পূর্ণ রাজকার্যাদি পরিচালনা করতেন দয়ারাম রায়। তাঁর দক্ষতার কারনে নাটোর রাজবংশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটে। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্ত পরোলোকগমন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রাণী ভবানী জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেন। নাটোরের ইতিহাসে তিনি জনহিতৈষী মহারাণী হিসাবে অভিহিত এবং আজো তাঁর স্মৃতি অম্লান। বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্‌-দৌলার সংগে রাণী ভবানীর আন্তরিক সুসম্পর্ক ছিল। কথিত আছে পলাশীর যুদ্ধে রাণী ভবানী নবাবের পক্ষ অবলম্বন করেন।
পরবর্তীতে রাণী ভবানী নায়েব দয়ারামের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে দিঘাপতিয়া পরগনা উপহার দেন। দিঘাপতিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান উত্তরা গণভবনটি দয়ারামের পরবর্তী বংশধর রাজা প্রমদানাথের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। কালক্রমে এই রাজপ্রাসাদটি প্রথমতঃ গভর্নর হাউস ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পরে উত্তরা গণভবনে পরিনত হয়।
দিঘাপতিয়া রাজবংশ ও রাজবাড়ী
ঐতিহ্যের জৌলুস, অতীতের রাজ-রাজন্যের স্মৃতি, প্রাচীনত্ব আর ইতিহাসের সোনালি দিনগুলোকে বুকে ধারণ করে নীরব সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি। প্রাচীন ঐতিহ্য আর প্রত্নতাত্ত্বিক ঐশ্বর্যমন্ডিত তিলোত্তমা এই রাজবাড়ি নাটোরকে এনে দিয়েছে এক বিশেষ খ্যাতি ও পরিচিতি।
বাংলার রাজা-জমিদারদের মধ্যে দিঘাপতিয়া রাজবংশ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। দয়ারাম রায় এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। ১৬৮০ সালে নাটোরের প্রখ্যাত কলম গ্রামের এক তিলি পরিবারে দয়ারাম রায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নরসিংহ রায়। নাটোর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রামজীবন যখন পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের অধীনে চাকুরী করতেন, সে সময় তিনি কাজ উপলক্ষে চলনবিল এলাকার কলম গ্রামে পৌঁছেন। সে সময় দু’জন বালক রাজা রামজীবনের নৌকার সামনে উপস্থিত হয়। দুটি বালকের মধ্যে একজনের কথাবার্তা ও বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে তিনি বালকটিকে নাটোরে নিয়ে আসেন এবং মাসিক আট আনা বেতনে চাকুরীতে নিয়োগ করেন। পরে সামান্য লেখাপড়া শিখে জমা-খরচ রাখার মতো যোগ্যতা অর্জন করেন এবং রামজীবন তাকে মাসিক ৮ আনার পরিবর্তে ৫ টাকা বেতনের মুহুরী নিযুক্ত করেন। পরবর্তীতে পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণ স্নেহ, ভালোবাসা ও সহানুভূতি, নবাব সরকারে ভ্রাতা রঘুনন্দনের প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং বাংলার নবাব দেওয়ান মুর্শিদকুলী খাঁনের নেকনজর- সবকিছু মিলে যখন রামজীবন জমিদারী লাভ করেন, তখন রামজীবনের সঙ্গে সঙ্গে দয়ারামেরও ভাগ্য খুলতে থাকে। তিনি প্রথমে রাজা রামজীবনের একজন সাধারণ কর্মচারী থাকলেও প্রতিভা, দক্ষতা আর বিশ্বস্ততা দিয়ে নাটোর রাজের দেওয়ান পর্যন্ত হয়েছিলেন। রাজা রামজীবন তাকে অত্যন্ত বিশ্বাস করতেন এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদ তার কাছে গচ্ছিত রাখতেন। রাজা সীতারাম রায়ের পতনের পর দয়ারাম রায় নাটোর রাজ্যের একজন পরাক্রমশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। যশোরের রাজা সীতারাম রায় বিদ্রোহী হলে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ নাটোর রাজের দেওয়ান দয়ারাম রায়ের সাহায্যে তাকে দমন ও পরাজিত করে নাটোর কারাগারে বন্দি করে রাখেন। সীতারাম রায়কে পরাজিত করায় নবাব সরকারে দয়ারামের প্রভাব বেড়ে যায় এবং তিনি ‘‘রাই রাইয়া’’ খেতাবে ভূষিত হন। সীতারাম রায়কে পরাজিত করে তিনি তার মূল্যবান সম্পদসমূহ লুণ্ঠন করেন। কিন্তু সীতারামের গৃহদেবতা কৃষ্ণজীর মূর্তি ছাড়া সব রামজীবনের হাতে অর্পণ করেন। দয়ারামের এহেন ব্যবহারে রামজীবন খুশি হয়ে দয়ারামকে কৃষ্ণজীর মূর্তি স্থাপনের জন্য পুরস্কারস্বরূপ দিঘাপতিয়ায় একখন্ড জমি দান করেন এবং বর্তমান বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা এলাকার নওখিলা পরগনা দান করেন। এটাই দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রথম জমিদারী। পরে তিনি লাভ করেন পরগনা ভাতুরিয়ার তরফ নন্দকুজ্বা, যশোরের মহল কালনা ও পাবনা জেলার তরফ সেলিমপুর। এভাবেই দিঘাপতিয়া রাজবংশের ও জমিদারীর গোড়াপত্তন হয় ১৭৬০ সালে। ৮০ বৎসর বয়সে ৫ কন্যা, ১ পুত্র ও প্রচুর ধন-সম্পদ রেখে রাজা দয়ারাম রায় ইহলোক ত্যাগ করেন। তিনিই প্রথমে ‘‘উত্তরা গণভবন’’ খ্যাত দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি নির্মাণ করেন।

অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির জমিদার গণেশ রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরীচ্যুত হন। দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারিটি তার ভাই রামজীবনের নামে বন্দোবস্ত নেন । এভাবে নাটোর রাজবংশের পত্তন হয়। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ সালে মতান্তরে ১৭১০ সালে । ১৭৩৪ সালে তিনি মারা যান । ১৭৩০ সালে রাণী ভবানীর সাথে রাজা রাম জীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয় । রাজা রাম জীবনের মৃত্যুর পরে রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন । রাণী ভবানীর রাজত্বকালে তার জমিদারি বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ , বীরভূম, মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

নাটোরে নীল বিদ্রোহ ১৮৫৯-১৮৬০ তে সংঘটিত হয়। ১৮৯৭ সালের জুনে নাটোরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের অধিবেশন হয় । সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সভাপতি, মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ অভ্যর্থনা নমিতির সভাপতি ও প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের চেষ্টায় সেবারই প্রথম রাজনৈতিক সভায় বাংলা ভাষার প্রচলন করা হয়। ১৯০১ সালে মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ কলকাতা কংগ্রেসের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৮৪৫ সালে রাজশাহী জেলার অধীনে নাটোর মহকুমার সৃষ্টি। আর অন্যান্য মহকুমার মতো জেলায় উন্নীত হয় ১৯৮৪ সালে।

১৯৭১ সালের ৫ মে গোপালপুরের চিনিকলের এম.ডি. মো. আজিম সহ প্রায় ২০০ মানুষকে নৃশংসভাবে পাকবাহিনী হত্যা করে। এই বধ্যভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার এবং রেলস্টেশনের নামকরণ হয়েছে আজিমনগর।

নাটোর_রাজবাড়ীর_সামনে

নাটোর রাজবাড়ীর ইতিহাস

অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির জমিদার গণেশ রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হন। দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারিটি তার ভাই রাম জীবনের নামে বন্দোবস্ত নেন। এভাবে নাটোর রাজবংশের পত্তন হয়। রাজা রাম জীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ সালে, মতান্তরে ১৭১০ সালে। ১৭৩৪ সালে তিনি মারা যান। ১৭৩০ সালে রাণী ভবানীর সাথে রাজা রাম জীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয়। রাজা রাম জীবনের মৃত্যুর পরে রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। রাণী ভবানীর রাজত্বকালে তার জমিদারি বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

This is the official Website of Uttara Ganabhaban -Copyright ©2022, Uttara Government of Bangladesh. Design & Develop by JBD IT