মোঘল শাসনামলে কামদেব মৈত্র ‘সরকার’ উপাধি প্রাপ্ত হন। পুঠিয়ার রাজা নরনারায়ণের সময়ে লস্করপুর পরাগনার অন্তর্ভুক্ত বাড়ইহাটি গ্রামের একজন তহশীলদার ছিলেন কামদেব সরকার। তহশীলদারী কাজের জন্য তাকে সময়ে সময়ে পুঠিয়ার রাজদরবারে আসা-যাওয়া করতে হতো। পুঠিয়া সে সময় ছিল বিখ্যাত জ্ঞান অর্জনের স্থান। তাঁর তিন পুত্র রামজীবন, রঘুনন্দন ও বিষ্ণুরাম পুঠিয়া থেকে লেখাপড়া করতেন। তিন পুত্রের মধ্যে মধ্যম পুত্র রঘুনন্দন ছিলেন বুদ্ধিমান। তিনি মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করেন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রীয় ভাষা পারসীতে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের সহযোগিতায় নবাব সরকারে চাকুরী প্রাপ্ত হন। রঘুনন্দন নবাব সরকারে ক্রমান্বয়ে প্রাধান্য বিস্তার করেন এবং বড় ভাই রামজীবনের নামে অনেক জমিদারী বন্দোবস্ত করে নেন। এভাবে রামজীবন রাজা উপাধি পেয়ে নাটোরে রাজ্য স্থাপন করেন। রামজীবনের জমিদারী প্রাপ্তি বা রাজা হবার পেছনে বেশ কিছু অলৌকিক কাহিনী আছে। যেমন, কারও মতে রামজীবন ও রঘুনন্দন প্রথম জীবনে পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের পূজার ফুল সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। একদিন ফুল তুলতে তুলতে রামজীবন ক্লান্ত হয়ে বাগানের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন। এমন সময় রাজা দর্পনারায়ণ সে পথ দিয়ে গমনের সময় দেখতে পেলেন যে, রামজীবনের মাথার ওপর দুটি বিষধর সর্প ফণা বিস্তার করে কঠিন সূর্যের তাপ থেকে তাকে রক্ষা করছে। এরূপ অলৌকিক ঘটনা রাজ্য প্রাপ্তির পূর্বাভাস বলে লোকে বিশ্বাস করতো। রাজা দর্পনারায়ণও সে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে রামজীবনকে ডেকে বলেন, ‘‘তুমি রাজা হবে, তবে রাজা হয়ে যেন পুঠিয়া রাজ্য গ্রাস করো না।’’ পরবর্তীতে রাজা দর্পনারায়ণের মাধ্যমেই রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। অনেকের মতে কামদেবের তিনপুত্র পুঠিয়া থেকে লেখাপড়া করতেন। তিন পুত্রের মধ্যে মধ্যম পুত্র রঘুনন্দন লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন। তার হাতের রাজশ্রী দেখে রাজা দর্পনারায়ণ ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন, তিনি রাজা হবেন। সে সময় থেকে রাজা দর্পনারায়ণ রঘুনন্দনকে খুব স্নেহের চোখে দেখতেন এবং তার লেখাপড়ার প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতেন। কোনো এক সময় নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ রাজা দর্পনারায়ণকে মুর্শিদাবাদে ডেকে পাঠান। রাজার সঙ্গে রঘুনন্দনও মুর্শিদাবাদে গমন করেন। মুর্শিদকুলী খাঁ রঘুনন্দনের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন এবং তিনি দর্পনারায়ণকে অনুরোধ করেন রঘুনন্দনকে রেখে পুঠিয়ায় ফিরে আসেন। তারপর রঘুনন্দন তার প্রতিভা বলে নবাবের দেওয়ান পর্যন্ত হন এবং ভাই রামজীবনের নামে বহু জমিদারী বন্দোবস্ত করেন।